
ধর্মচিন্তা ও দেশাত্মবোধ
মুহাম্মাদ সালীমুল্লাহ
“ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার” কথাটি প্রতিষ্ঠা করার পর ইদানিং কেউ কেউ আরেকটু এগিয়ে বলতে শুরু করেছেন, “যে জাতি রাষ্ট্রের চেয়ে ধর্মকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তাদের মুক্তি পরকালেই সম্ভব, দুনিয়াতে নয়”!! অর্থাৎ ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের একটি Inverse Relationship রয়েছে এবং অধিক ধর্মাচারে রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে; আর নিষ্ঠার সঙ্গে নাগরিক দায়িত্ব পালনে ধর্মাচার বাঁধাগ্রস্ত হবে!!
আসুন, সমীকরণ করতে চেষ্টা করি-
(১) আপনি চাকুরি বা স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত। আপনার সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতাপূর্ণ কর্মে দেশ ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নেয়ার এই কর্মযজ্ঞে ওই নারীর কর্মও অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ যিনি বাসায় থেকে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সন্তান প্রতিপালন করেন। আপনি গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সম্পদের অপচয় ঠেকাতে সচেতন এবং অন্যায় কাজ আপনার সাধ্য অনুসারে প্রতিহত করতে সচেষ্ট।
(২) নামাজের সময় হলে আপনি মসজিদ বা পবিত্র স্থানে নামাজ আদায় করেন, সাওম পালন করেন এবং জাকাত দেন। অথবা, অমুসলিমগণ যার যার ধর্মের নির্ধারিত আচার-ব্রত পালন করেন। আপনি পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও সমাজ সদস্যদের সাথে সুন্দর আচরণ করেন ও প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেন। জীবিকার প্রয়োজনে কাজ করা ছাড়াও ধর্মাচার হিসেবে আপনি আরও কিছু কাজ করেন বা সময় ব্যায় করেন।
এখন দেখুন- আপনি ১ম প্যারায় উল্লিখিত কাজগুলো না করলে দেশের অগ্রযাত্রা থমকে যাবে। আর, ২য় প্যারার কাজগুলো না করলে ধর্মাচার লঙ্ঘন হবে; তবে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। তাহলে কী অনুভূত হচ্ছে? দেশ রক্ষায় ধর্মের দরকার নেই, তাই তো??? এটাই তো বলতে চায় ওরা !
অথচ দেখুন, ১ম প্যারায় উল্লিখিত কাজগুলো যতটা না রাষ্ট্রের নির্দেশনা, তারচেয়ে বেশি ধর্মের বিধান। পৃথিবীতে ন্যায়-নিষ্ঠ আচরণ করা সকল ধর্মেরই বিধান- চাই ব্যক্তির সাথে, কি রাষ্ট্রের সাথে। আর, এরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- ২য় প্যারায় উল্লিখিত কাজগুলোর পরম অনুশীলনই ১ম প্যারার কাজগুলোকে নিশ্চিত করে।
পরিষ্কার করছি- কোন ধরণের প্রেরণা ছাড়া সততা ও নিষ্ঠা স্থায়ী হবে না এবং আইন দ্বারাও তা নিশ্চিত করা যাবে না। অনেক দুর্নীতির সুযোগ থাকে যা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে না বা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়। অনেক অপরাধ আছে যা নির্জনে করলে অপর কারও জানার সুযোগ থাকে না।
তাই, ব্যক্তিমানসে যদি এই বোধ সদা জাগ্রত থাকে যে, “কেউ একজন দেখছেন এবং মৃত্যুর পর এর জন্য ভয়াবহ শাস্তি অবধারিত”, তবেই কেবল সততা ও নিষ্ঠা নিশ্চিত করা যাবে এবং দুর্নীতি ও অপরাধ রোধ করা যাবে। তবে হ্যাঁ, আইনের কঠোর প্রয়োগও আবশ্যক; কারণ সবাই ধর্মকে ধারণ করেন না।
৪ Comments